কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা. সহজ ভাষায় জানুন, কিভাবে কোচিং বাণিজ্য বাস্তবে শিক্ষার নামে ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে; এর ভালো-মন্দ দিকগুলো বুঝুন দ্রুত।
বাণিজ্যিক কোচিং সেক্টরের বৃদ্ধি এবং কারণ
গত কয়েক দশকে শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন ও প্রতিযোগিতার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। সরকারি শিক্ষাক্রম এবং বড় পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যুবসমাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই অতিরিক্ত সহায়তার সন্ধান করে। ফলে, বাজারে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার, যারা শিক্ষার্থী সংগ্রহ এবং লাভজনকতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে। সরকারি পরীক্ষার প্রবেশ পদক্ষেপ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা শিক্ষার্থীর পরিবারকে অর্থ ব্যয় করতে উদ্বায়ী করেছে।
আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহজলভ্যতা। ঘরে বসেই ভিডিও লেকচার, লাইভ সেশন এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে কোচিং প্যাকেজ কেনা সম্ভ &্ত হয়েছে। এর ফলে প্রতিটি কোচ বা প্রতিষ্ঠান ক্রমাগত শিক্ষার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার কৌশল অবলম্বন করছে। ব্র্যান্ডিং, বিপণন, এবং ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেমের উন্নতি সেই সঙ্গে এই বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে বেগবান করেছে।
| উন্নয়ন সূচক | প্রভাব |
|---|---|
| প্রবেশপত্র পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে | অতিরিক্ত কোচিং সেন্টার |
| অনলাইন শিক্ষা সাইটের উত্থান | ডিজিটাল কোচিং বৃদ্ধ |
| শিক্ষার্থীর পারিবারিক চাপ | ব্যয় বৃদ্ধি |
কোচিং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিন্যাস
প্রতিটি কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের আয়ের মডেল ব্যবহার করে। মাসিক সাবস্ক্রিপশন, সেশনভিত্তিক ফি, প্রশিক্ষণ সামগ্রী বিক্রি এবং অনলাইন কোর্স থেকে আয় সংগৃহীত হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ অফার করে, যেখানে লাইভ ক্লাস, ভিডিও আর্কাইভ এবং সাপোর্ট চ্যাট একত্রে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর ফলে, শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্যাকেজ থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাছাই করতে পারেন।
-
মাসিক বা সাপ্তাহিক ফি মডেল
-
এককালীন সেশন ফি
-
অনলাইন ভিডিও এবং ই-বুক বিক্রি
-
প্রিমিয়াম ওয়েবিনার ও ওয়ার্কশপ
বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানগুলো ‘এফিএমওসি’ বা ফ্লেক্সিবল মডেল অফ রেভিনিউ ক্রিয়েট করে। শীতে বা উৎসব মৌসুমে বিশেষ ডিসকাউন্ট এবং বন্ড অফার দেওয়া হয়। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যেখানে কম ইক্যুইটি ও রয়্যালটি ফি থেকে দ্রুত সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে।
কোচিং ক্লাসে শিক্ষার মান এবং প্রবণতা
কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা পরিচালনায় বিজ্ঞাপন এবং পিকচার ফ্রেম ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শেখার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হচ্ছে। অনেক কোচিং সেন্টার দ্রুত ফলাফল দেখাতে ওভারলোড শেখানোর কৌশল অবলম্বন করছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা গভীর ধারণা না নিয়ে শুধু প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি অনুশীলন করছে, যা সত্যিকার শিক্ষার মান নষ্ট করতে পারে।
| প্রবণতা | প্রভাব |
|---|---|
| ডিজিটাল কোচিং | লিনিয়ার শেখার অভাব |
| মাইক্রো-লার্নিং সেশন | শিক্ষার্থী বুঝতে সময় কম |
| কন্সাল্টেশন সাপোর্ট | নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান |
ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রাম ব্যবস্থা করে কোচিং সেন্টার শিক্ষার্থীদের সময়োপযোগী সাপোর্ট দেয়। তবে যাঁরা শুধুমাত্র গ্রেড-বুস্টিংয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়, তারা দক্ষতার পরিবর্তে সিরিয়াল রিটেনশনের উপর ফোকাস বাড়ায়। এতে ছাত্রের সমস্যার গভীরতা বোঝা যায় না, দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়। স্বীকৃত শিক্ষাবর্ষ ও দিকনির্দেশনা মেনে প্রকৃত শিক্ষার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আপনাকে প্রাসঙ্গিক ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা এর প্রভাব শিক্ষার্থীর উপর
শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লাসের গতি এতটাই দ্রুত যে অনেক সময় পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগই থাকে না। এতে করোনা পরবর্তী যুগে শিক্ষা হারিয়ে যেতে বসেছে। পরীক্ষার উপর অস্বাস্থ্যকর ফোকাস শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি হ্রাস করছে। দীর্ঘমেয়াদে, এই চাপে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়।
-
উচ্চমাত্রার চাপ ও উদ্বেগ
-
শেখার গভীরতার অভাব
-
স্বল্পমেয়াদী প্রস্তুতির উপর নির্ভরতা
-
অন ভেলু এডুকেশন সাপোর্ট হ্রাস
যোগাযোগ দক্ষতার অবনতি ও অনুপ্রেরণার ভ্যাকুয়াম তৈরি হচ্ছে, কারণ প্রায় সবকিছু জোর করে রেটিং-ভিত্তিক মানদণ্ডে যাচাই করা হয়। সফলতার মাপকাঠি হিসেবে টেস্ট স্কোরকে অতি গুরুত্বপূর্ণ করার ফলে শিক্ষার্থীরা নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তিত্বের বিকাশ এবং মূল্যবোধ গড়ে তুলতে বাঁধা দিচ্ছে।
আইনি এবং নৈতিক দিক
শিক্ষা ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে নীতি-নিয়মের অভাব কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসাকে আইনগত ও নৈতিক সংকটে ফেলেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়া কোচিং দেয়, আবার বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনে ভর্তি বাড়ায়। প্রতারণামূলক গ্যারান্টি এবং আগাম ফি আদায়ের কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
| আইনি চ্যালেঞ্জ | নৈতিক ঝুঁকি |
|---|---|
| লাইসেন্সবিহীন কোচিং | গুণগত মান হ্রাস |
| প্রচারের হাইপ | অপ্রাপ্ত প্রতিশ্রুতি |
| অগ্রিম ফি আদায় | অর্থনৈতিক দুর্বলতা |
“শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করার ফলে মনুষ্যত্বের একটি অমুল্য দিক হারিয়ে যাচ্ছে।” – Eulalia Mueller
সরকারি মনিটরিং এবং ভোক্তা অধিকার আইন কঠোর করলে এই ব্যবসায়িক অনিয়ম সীমিত হবে। পাশাপাশি কোচিং প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স ও রেটিং সিস্টেম গ্রহণের নির্দেশ দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সুরক্ষিত পরিবেশে শিক্ষালাভ করতে পারে। নৈতিক গাইডলাইন মেনে চলার মাধ্যমে শিক্ষাকে মূল উদ্দেশ্য করে তোলা সম্ভব হবে।
প্রযুক্তির ভূমিকা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসাকে নতুন দিক দিয়েছে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চ্যাটবট, এবং অ্যানালাইটিক্সের মাধ্যমে কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা মাপছে। শিক্ষার্থীর দুর্বলতা চিহ্নিত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধনমূলক গাইডলাইন প্রদান করা হচ্ছে।
-
ভার্চুয়াল লার্নিং এনভায়রনমেন্ট
-
এআই-পাওয়ারড অ্যাসেসমেন্ট টুল
-
পার্সোনালাইজড শিক্ষা প্ল্যান
-
রিয়েল-টাইম পারফরম্যান্স মনিটরিং
ভিডিও আর্কাইভ, ইন্টারেক্টিভ কোডিং সিমুলেশন এবং গ্যামিফিকেশন শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে। তবে প্রযুক্তির অপব্যবহার শিক্ষার গভীরতা কমিয়ে দ্রুত ফলাফল দেখানোর কৌশলকে আরও উৎসাহিত করছে। ফলে প্রকৃত দক্ষতা গড়ে ওঠার পরিবর্তে শুধু র্যাংকিং উন্নয়নে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
মার্কেটিং কৌশল এবং ব্যতিক্রম
বাজারীয় চাপের কারণে কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মার্কেটিং কৌশল অবলম্বন করছে। সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, ইনফ্লুয়েন্সার পার্টনারশিপ, এবং ছাত্র-সাফল্যকাহিনী প্রদর্শনের মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়। ব্র্যান্ডিং বোঝাতে ফ্রেশ লোগো, কনসেপ্ট ভিডিও এবং পপ-আপ ইভেন্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেকে আলাদা স্থাপন করে।
| কৌশল | কার্যকারিতা |
|---|---|
| ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং | বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি |
| কোচদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং | ছাত্র আকর্ষণ |
| ফ্রি ট্রায়াল ক্লাস | যোগাযোগ বাড়ে |
সর্বশেষ মডেল হলো ‘এডুকেশন হাব’, যেখানে কোচিং, টিউশন, এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং একত্রে দেওয়া হয়। এতে অনেকে পুরো শিক্ষাপ্যাকেজ কেনার ফাঁদে পড়ে। এখানে মূল্য তালিকা স্পষ্ট না হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীকে গণিত-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়।
মূল্যায়ন: রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য পেতে গড়ে উঠেছে কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা। এর বিনিয়োগ ভালোผล দিচ্ছে কি না, তা নির্ধারণে ROI হিসাব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যয়-উপর্যুক্ত অর্জিত ফলাফল ও দীর্ঘমেয়াদী দক্ষতা মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
-
খরচ বনাম অর্জিত স্কোর
-
দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা উন্নয়ন
-
স্টুডেন্ট স্যাটিসফ্যাকশন সার্ভে
-
ক্যারিয়ার আউটকাম ট্র্যাকিং
শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নয়, বিনিয়োগের ফল মূল্যায়নের জন্য ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, আত্মবিশ্বাস এবং কমিউনিকেশন স্কিল উন্নয়নকে মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ভালো ROI মানে শুধুমাত্র টাকা ফেরত নয়, বরং ছাত্রের সামগ্রিক গুণগত উন্নয়নের নিশ্চয়তা।
পরিবর্তিত শিক্ষার্থী প্রত্যাশা
সময়ের সঙ্গে ছাত্রদের প্রত্যাশা পরিবর্তিত হয়েছে। শুধুমাত্র অ্যাসেসমেন্ট ক্লিয়ার করা নয়, বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে। ফলে কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কোর্স কাঠামোতে সফট স্কিল, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এবং প্রোজেক্ট ভিত্তিক শেখার অন্তর্ভুক্ত করছে।
| প্রত্যাশা | প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া |
|---|---|
| ক্যারিয়ার-ফোকাসড লার্নিং | ইন্টার্নশিপ অপশন |
| ইনডাস্ট্রি রিলেভেন্ট সিলেবাস | কোম্পানি ওয়ার্কশপ |
| বিহেভিয়রাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট | লাইভ সিমুলেশন |
আমি প্রতিজন ছাত্রকে সমন্বিত শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাই। কারণ অভিজ্ঞতা ছাড়া শিক্ষার মান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এজন্য সংক্ষিপ্তকরণ করা ছাড়াও প্রকল্প ভিত্তিক স্লট তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ভেতরের দক্ষতা উদঘাটন করা জরুরি।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
আগামীতে কোচিং বাণিজ্য পরিবেশে আরও স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন দেখতে পাব। লাইসেন্সিং সিস্টেমকে কঠোর করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে হাইব্রিড মডেল অর্থাৎ অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসের সমন্বয় গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।
-
লাইসেন্স ও অ্যাক্রেডিটেশন বাধ্যতামূলক
-
হাইব্রিড লার্নিং সলিউশন
-
এডুকেশনাল ডাটা সিকিউরিটি
-
পার্সোনাল বেল গেইমিফাইড মডিউল
সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক ফ্রেমওয়ার্ক এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু হলে শিক্ষাকে ব্যবসার হাত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে শিক্ষার্থীর মেরুদণ্ড গড়ে তুলতে উৎসাহিত করতে হবে, ব্যবসায়িক লাভ নয়। এই পদ্ধতি শিক্ষার সত্যিকারের মূল্য রক্ষা করবে।
কোচিং শিল্পের ইতিহাস ও উত্থান
বাংলাদেশে কোচিং কেন্দ্রের শুরুলগ্ন থেকেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার ধারণা জাগ্রত হয়েছিল। গত কয়েক দশকে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষেত্রটি পরিণত হয়েছে এক বিস্তীর্ণ বাণিজ্যে। প্রাথমিকভাবে যেসব গোষ্ঠী স্বল্পসংখ্যক, অল্পভাড়া নিয়ে ক্লাস নেয়, আজ সেগুলো প্রতিযোগিতা উপযোগী পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ভয়কে কাটিয়ে ভালো ফলাফলের আশায় কোচিংয়ে ভিড় জমায়, প্রবেশ করে এক নির্ধারিত পরিকল্পনার আওতায়। এই প্রবণতা পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। বাজারের চাহিদার পরিসরে সাড়া দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা, সিন্ডিকেট এবং একাধিক সিলেবাস। এর ফলে কোচিং কেন্দ্রগুলোতে নতুন ধারণা যেমন বিষয়ভিত্তিক গোষ্ঠী আলোচনা হবে, তেমনি প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন সভা শুরু হয়েছে। তথাপি আজও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শিক্ষার্থীর সাফল্যকে প্রাধান্য না দিয়ে লাভের সুযোগ হিসাবে দেখছে। এই প্রসারকে বোঝার জন্য বিবেচনা করতে হয় কিভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোগ থেকে এক বিস্তীর্ণ সুসংগঠিত ব্যবসা গড়ে উঠল, সেই প্রেক্ষাপটে কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা বিষয়টি আমাদের বিশ্লেষণের প্রাথমিক পর্ব।
কোচিং বাজারের বর্তমান পরিসর
| বছর | কোচিং কেন্দ্র সংখ্যা |
|---|---|
| ২০১০ | ৫০০+ |
| ২০১৫ | ১৫০০+ |
| ২০২০ | ৪৫০০+ |
| ২০২৩ | ৭০০০+ |
বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। সরকারি গণনা অনুযায়ী, দেশের প্রায় প্রত্যেক জেলায় বিদ্যমান একাধিক কোচিং কেন্দ্র। রাজধানীর বিশেষ ওই সেন্টারে ভর্তি সংখ্যা নির্ধারণ করে দেশজুড়ে প্রবণতা। তথ্য অনুযায়ী, কোচিং এর বাজার মূলত পাঠ্যক্রম, পরীক্ষামূলক প্রস্তুতি ও বৃত্তিমূলক কোর্স এই তিন ভাগে বিভক্ত। ক্লাসরুমের পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যাপক প্রসার লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন কোচিং প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অ্যাপ, ভিডিও লেকচার ও লাইভ সেশন চালু করেছে। এভাবে সরকারী ও বেসরকারি পরীক্ষা-পূর্ব প্রশিক্ষণ দান কোচিং সেন্টারের মূল কার্যক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিবর্তনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে কেন কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা নিয়ে জনসাধারণের প্রশ্ন জন্মাচ্ছে।
প্রধান বিভাগসমূহ
- একাডেমিক প্রস্তুতি
- প্রফেশনাল সার্টিফিকেশন
- বিশেষায়িত কোর্স
- অনলাইন-অফলাইন সমন্বয়
কোচিং সেন্টারের অর্থনৈতিক কাঠামো
কোচিং সেন্টার পরিচালনার ব্যয় সাধারণত রেন্ট, বেতন, উপকরণ, বিজ্ঞাপন ও প্রযুক্তি সমর্থন এই পাঁচটি প্রধান বিভাগে বিভক্ত। একাধিক কেন্দ্রে মাসিক ভাড়া উচ্চপ্রান্তে থাকে, বিশেষ করে শহরতলির তুলনায় মহানগরে ভাড়া অনেকটা বেশি। শিক্ষক বা প্রশিক্ষকের মজুরি নির্ভর করে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে খরচ একটি বড় অংশ দখল করে। ফ্লাইয়ার বিতরণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন এগুলো ক্রমাগত ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনলাইন সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশন এবং ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের খরচ উল্লেখযোগ্য।
| ব্যয়ের ধরণ | মোট ব্যয় (% ) |
|---|---|
| রেন্ট | ৩৫% |
| বেতন ও পারিশ্রমিক | ৪০% |
| বিজ্ঞাপন | ১৫% |
| প্রযুক্তি খরচ | ১০% |
মূল্য নির্ধারণ ও অর্থনৈতিক সুবিধা-অসুবিধা
কোচিং ফি কাঠামোতে সাধারণত প্রতি মাসে ফি, কোর্সভিত্তিক ফি অথবা এককালীন টিউশন চার্জের ব্যবস্থাও চালু থাকে। ছোট কোর্সের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক চার্জ ধরা হয়, দীর্ঘতর প্রিপারেশন প্রোগ্রামে মাসিক প্যাকেজ। দাম স্থির করার পেছনে বাজারের চাহিদা ও অন্যান্য প্রতিযোগীর মূল্য নির্ধারণকে প্রধান প্রভাবক হিসেবে নেয়া হয়। শিক্ষার্থীর আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করেও অনেক প্রতিষ্ঠান বিশেষ ডিসকাউন্ট বা অর্থসাহায্য স্কিম চালু করে।
মূল্যস্তর বিবিধ
- সাশ্রয়ী মাসিক প্যাকেজ
- মধ্যমমানের ভর্তি ফি
- প্রিমিয়াম গ্রুপ সেশন
- মিনি-গ্রুপ ডিসকাউন্ট
ইকোনমিক সাপোর্টের দিক থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষানবিস স্কলারশিপ দিয়ে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায়। তবে বাজারে সার্বিক লাভের চাপে কোচিংকে অনেক সময় শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে দেখা হয়। এই প্রেক্ষাপটে কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা শিরোনামে আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা আরও বৃদ্ধি পায়।
কোচিং সেন্টারের মানসম্মত পর্যালোচনা সূচক
| কাঠামোগত দিক | মানদণ্ড |
|---|---|
| ক্লাসরুম অবকাঠামো | আরামদায়ক, পরিবেশবান্ধব |
| শিক্ষক সাপোর্ট | ফিডব্যাক, ওয়ান-অন-ওয়ান কনসাল্টেশন |
| ল্যাব ও প্রযুক্তি | আধুনিক সরঞ্জাম, ইন্টারনেট |
| লাইব্রেরি সুবিধা | বিস্তৃত পাঠ্যসামগ্রী |
গুণগত মনিটরিংয়ে সেন্টারের পারফরম্যান্স পরিমাপক হিসেবে পরীক্ষার ফল, পরীক্ষা-পূর্ব ফিডব্যাক এবং শিক্ষার্থী সন্তুষ্টি জরিপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একটি স্বচ্ছ মানদণ্ড নিশ্চিত করতে সার্টিফায়েড এক্সটার্নাল অডিটিং এবং অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা সেশনও আয়োজন করে থাকে অনেক প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার গ্রেড উন্নয়নে অতিরিক্ত টিউটোরিয়াল সেশন ও মক টেস্টের ব্যবস্থা করে, যাতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার চাপ সামলাতে পারে। এসব সূচক নয় শুধু অপারেশনাল সফলতার মাপকাঠি, বরং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে টিকে থাকার निर्णায়ক বাহন হিসেবে কাজ করে।
অনলাইন vs অফলাইন কোচিং ব্যবস্থার তুলনা
| ক্ষেত্র | অনলাইন কোচিং | অফলাইন কোচিং |
|---|---|---|
| লেভেল অ্যাক্সেস | যে কোনো স্থান থেকে | লোকেশনের সীমিত |
| ইন্টারঅ্যাকশন | ভিডিও কল, চ্যাট | প্রতক্ষ ইন্টারঅ্যাকশন |
| ফি কাঠামো | সাশ্রয়ী ও সাবস্ক্রিপশন | উচ্চ ভাড়া, এককালীন |
| সুবিধা | টাইম ম্যানেজমেন্ট | গভীর মনযোগ |
অনলাইন ক্লাসে রয়েছে স্বাধীন সময় ব্যবস্থাপনা সুবিধা, যেখানে গতি নির্ধারণ শিক্ষার্থী নিজেই করে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যা বা ইন্টারনেট সিগন্যাল দুর্বল হলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। অফলাইন ক্লাসে সোজাসুজি শিক্ষকের নির্দেশনা পাওয়া যায়, কিন্তু যাতায়াতের সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়। একাডেমিক সাপোর্টের জন্য হাইব্রিড মডেলের প্রবণতা দেখা গেছে, যেখানে অফলাইন ক্লাসের পাশাপাশি ডিজিটাল রিসোর্স ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক পদ্ধতির নিজস্ব শক্তি ও সীমাবদ্ধতা থাকায় শিক্ষার্থীর প্রয়োজন ও আর্থিক সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে পছন্দ গড়ে ওঠে।
শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব ও মোটিভেশন
মোটিভেশনাল ফ্যাক্টর
- পরীক্ষা-ভয় কাটানো
- উচ্চ র্যাঙ্কিং ও রেজাল্ট
- পিয়ার গ্রুপ প্রভাব
- অভিভাবকের প্রত্যাশা
শিক্ষার্থীদের মনোবল একাধিক ফ্যাক্টরের দ্বারা প্রভাবিত হয়। কোচিং সেন্টারগুলোতে পাঠচক্র, এচিভমেন্ট বর্ড, অনুপ্রেরণামূলক সেশন আয়োজনের কারণ মূলত মোটিভেশন বাড়ানো। ত্রৈমাসিক মক টেস্ট করার মাধ্যমে স্ব-মূল্যায়ন সহজ হয়, যা আরও প্রবল মনোযোগ তৈরি করে। সামাজিক চাপ ও পারিবারিক প্রত্যাশার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাস হারায় ও প্রতি মুহূর্তে কোচিং সেন্টারের আশ্রয় নেয়। “সফল ছাত্র জীবনের ছবি” গড়ে তুলতে সেন্টারগুলো ওয়ার্কশপ, সেমিনার এবং কাউন্সেলিং সেশন চালায়। কিন্তু কখনো কখনো অপ্রতুল সমর্থন বা অতিরিক্ত বাড়তি ফি চাপ মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।
প্রশিক্ষকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নির্ধারণ
| যোগ্যতা মান | ক্রাইটেরিয়া |
|---|---|
| ডিগ্রি | কমপক্ষে মাস্টার্স |
| পেশাদার কোর্স | সংশ্লিষ্ট সাবজেক্ট সার্টিফিকেশন |
| উদ্দেশ্য বেরিয়ার্স | ইন্টারভিউ, ডেমো ক্লাস |
| পারফরম্যান্স মূল্যায়ন | পুনরায় মূল্যায়ন, ফিডব্যাক |
প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক ধাপে শিক্ষক নির্বাচন করে রিজিউমি স্ক্রিনিং, ডেমো ক্লাস এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা ছাড়াও শিক্ষাদান পদ্ধতির দক্ষতা যাচাই করতে কোর্স কোঅর্ডিনেটররা নিয়মিত ওয়ার্কশপ আয়োজন করে। নবীন প্রশিক্ষকদের জন্য মেন্টরের তত্ত্বাবধান জরুরি। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ফিডব্যাক ভিত্তিক ওয়ার্কস্টেশন সাপোর্ট ক্ষুদ্র অথচ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এই পদক্ষেপগুলো নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান বজায় থাকছে। শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈচিত্র্য, বহুমুখী উদাহরণ এবং ইন্টারেক্টিভ প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কোচিং কেন্দ্রের সুনাম বাড়ায়। এমন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া থাকলেই কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা শিরোনামের সমালোচনামূলক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রযুক্তির ভূমিকা ও ডিজিটাল সলিউশন
ডিজিটাল টুলস
- লেখচিত্র সফটওয়্যার
- ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম
- লাইভ স্ট্রিমিং সেবা
- এআই ভিত্তিক মূল্যায়ন টুল
প্রাকটিক্যাল সেশন, কোড-চ্যালেঞ্জ, কোয়িজ এবং ভিডিও আলোচনা এই সব কিছুকে ডিজিটাল সলিউশনে রূপ দেয়ার জন্য কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করছে সফটওয়্যার ও প্ল্যাটফর্মে। শিক্ষার্থীরা যখন মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে অ্যাক্সেস পায়, তখন গ্লোবাল টিয়ার টেক সমাধানগুলো অতিক্রম করে দ্রুত লাভবান হয়। শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং, রিয়েল-টাইম ফিডব্যাক এবং গেমিফিকেশন পয়েন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে উৎসাহিত করে তারা। তবে প্রযুক্তির অভাবে যে কয়েকটি কেন্দ্র পিছিয়ে আছে, সেখানকার শিক্ষার্থীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সমন্বিত প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষক ট্রেনিং অপরিহার্য।
“কোচিং শিল্পের ভেতরকার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ শিক্ষার্থীর স্বার্থে প্রতিফলিত হলে ব্যাপারটি প্রকৃত অর্থেই মূল্যবান হবে।” – Dr. Cesar Torp
আইন ও নীতিমালা নির্বাহ
| আইনগত দিক | নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ |
|---|---|
| লাইসেন্সিং | শিক্ষা মন্ত্রণালয় |
| ভর্তিকাল পরিদর্শন | জেলা শিক্ষা অফিস |
| কোর্স মেনে চলা | বোর্ড পরিদর্শন |
| ভোক্তা অধিকার | ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেড |
কোচিং কেন্দ্র পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ও অনুমতি আবশ্যক। মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট মানদণ্ডে পরীক্ষা চালায়, অফিসিয়াল ভর্তিকাল পরিদর্শন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কোর্স স্ট্রাকচার, শিক্ষক যোগ্যতা, পরীক্ষামূলক সেশনগুলোও নিয়ম অনুসারে যাচাই করা হয়। ভোক্তা অধিকার আইনে শিক্ষার্থী বাতিল ফি, ফেরত নীতিমালা এবং প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন রোধের বিধি সংবলিত। আইনগত শাসন-ব্যবস্থার অভাবে কিছু সেন্টার অবৈধ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা নিরুৎসাহিত করা সহায়ক। পারদর্শিতা বজায় রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত রোল প্লে অডিট এবং ক্লায়েন্ট ফিডব্যাক সেশন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
প্রভাবের মাত্রা
- শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত চাপ
- ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে প্রতিযোগিতা
- পারিবারিক প্রত্যাশার চাপ
- শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ
কোচিং কেন্দ্র জীবনের প্রতিদিনের সক্রিয় অংশ হয়ে উঠেছে। শিক্ষাবাণিজ্যের বৃদ্ধির ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে সময় কম পাচ্ছে। পারিবারিক সম্পর্ক, অবসর জীবন এবং নিজস্ব সৃজনশীল কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ছে। তরুণরা মেরিট তালিকায় উচ্চস্থান পাবার প্রতিযোগিতায় আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। “শিক্ষার নামে ব্যবসা” এই দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক মূলনীতিতে প্রভাব ফেলছে, যেখানে শিক্ষা পৌঁছার অধিকাংশ মাধ্যমই বাণিজ্যিকীকরণে মিশেছে। ফলে সামাজিক সমতা বিনষ্ট হচ্ছে এবং শিক্ষার নৈতিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও অভিজ্ঞতা
| ফ্যাক্টর | শিক্ষার্থীর অভিমত |
|---|---|
| ফি ও মান | ধার্যিত ফি তুলনামূলক |
| ক্লাস টাইম | সুবিধাজনক সময় |
| পাঠ্যদ্রব্য | সম্পূর্ণ ও আপডেটেড |
| ফিডব্যাক | দ্রুত ও কার্যকর |
অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যাশা করে কোচিংতে গেলে তারা কাঙ্ক্ষিত গ্রেড অর্জন করতে পারবে; কিন্তু বাস্তবে অর্জনের তরলতা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ, আদর্শ শিক্ষাদান, একাধিক প্রশিক্ষণের অভাব এসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তারা। কোচিং সেন্টারের সফলতার গল্প শোনার পর প্রাথমিক উত্তেজনা বাড়লেও ফাইনাল রেজাল্টে অভিজ্ঞতা মিশ্র হয়। শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করে মানসম্মত শিক্ষাদান, প্রযুক্তি সাপোর্ট ও মানসিক সহায়তা, তবে অনেক সময় এসব থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে কোচিং থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ও অভিজ্ঞতা পর্যায়ক্রমে বিশ্লেষণ শুরু হয়।
ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং কৌশল
কৌশলগত উপাদান
- সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা
- পরীক্ষার ফল ভিত্তিক প্রচার
- শিক্ষক ব্র্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স
- ছাত্র সাক্ষাৎকার অর্থাৎ টেস্টিমনী
কোচিং সেন্টারগুলো বিজ্ঞাপনে পরীক্ষার ফল তুলে ধরে প্রচারণা চালায়। বিজ্ঞাপন প্যানেল, পোস্টার, অনলাইন অ্যাড, ইউটিউব শো এই সব মাধ্যম ব্যবহার করে তারা ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায়। শিক্ষকের ব্যক্তিগত সাফল্য, ছাত্র-ছাত্রীর কথোপকথন এবং প্রশংসাপত্র যুক্ত করে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ সেশন, কোর্স টিজার এবং ইনস্টাগ্রাম স্টোরিজে শিক্ষার্থীদের সাফল্য দেখিয়ে আকর্ষণ বাড়ায়। একটি সুসংগঠিত ব্র্যান্ড ইমেজ বজায় রাখতে ম্যানেজমেন্ট টিম নিয়মিত ব্র্যান্ড অডিট করে ও কাস্টমার রিভিউ সংগ্রহ করে। এইসব প্রচেষ্টা নিশ্চিত করে কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা শিরোনামের আদলটি আরও সুস্পষ্ট হয়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও পরিবর্তন
| ট্রেন্ড | সম্ভাবনা |
|---|---|
| গেমিফিকেশন | ইন্টারঅ্যাকটিভ শিক্ষানীতি |
| এআই টিউটর | পারসোনালাইজড লার্নিং |
| ভিআর/এআর | ইমারসিভ এডুকেশন |
| হাইব্রিড মডেল | বৃহত্তর অ্যাক্সেস |
এর ফলে শীঘ্রই শিক্ষাবাণিজ্যে বহুমাত্রিক পরিবর্তন আসবে। প্রযুক্তি অভ্যন্তরীণ কোর্স মডিউল উন্নত করবে, শিক্ষার্থীর ডেটা বিশ্লেষণ করে নিজস্ব পথ দেখাবে। উন্নত এআই ভিত্তিক টিউটরিং সিস্টেম সরবরাহের মাধ্যমে পারসোনাল কোচিং ফি হ্রাস পাবে এবং কোর্স বিশেষজ্ঞের হাতে সময় কমে যাবে। গেমিফিকেশন সিস্টেম স্বতন্ত্র পাঠ্যক্রমে মজা যোগ করে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অংশগ্রহণ বাড়াবে। হাইব্রিড মডেলের প্রসার শিক্ষার্থীদের স্থানীয় বাধা দূর করে শিক্ষায় সমকোণী সুযোগ এনে দেবে। এসব পরিবর্তনের ফলেই কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা ধ্রুবক নয়, পরিবর্তনশীল ব্যবস্থায় রূপ নেবে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েক বছর আগে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম, যেখানে কোচিং বাণিজ্য: শিক্ষার নামে ব্যবসা এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি কীভাবে বিভিন্ন মানের কোচিং কেন্দ্র আর্থিক লেনদেনের পিছনে পড়ে যায়, শিক্ষার্থীর স্বার্থ কখনো সরি সালে সরে দিয়ে। কিন্তু ভাল সংগঠিত কোচিং সেন্টারগুলোতে আমি নিজেও অনেক দক্ষতা অর্জন করেছি, যেখানে শিক্ষাদানই ছিল প্রধান লক্ষ্য.
কোচিং বাণিজ্য কী?
কোচিং বাণিজ্য বলতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরীক্ষায় অথবা বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিষয়ক ব্যবসাকে বোঝায়। এখানে পাঠদানের পাশাপাশি মক টেস্ট, স্টাডি মেটেরিয়াল এবং নিয়মিত মূল্যায়ন দেওয়া হয়।
কেন কোচিং বাণিজ্য জনপ্রিয়?
শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বা ভর্তি পরীক্ষায় সফলতার জন্য অতিরিক্ত সহায়তা প্রয়োজন মনে করে। কোচিং সেন্টারগুলো বিষয় ভিত্তিক ধারণা স্পষ্ট করে, সময় সাশ্রয় করে এবং নিয়মিত অনুশীলন করিয়ে ফলাফলকে লক্ষ্যভিত্তিক করে তোলে।
কোচিং সেন্টারের খরচ কেমন হতে পারে?
প্রতিষ্ঠানের সুনাম, বিষয়ভিত্তিক কোর্স এবং অবকাঠামোর উপর নির্ভর করে খরচ পরিবর্তিত হয়। সাধারণত মাসিক ফি, শিক্ষাবস্তু এবং পরীক্ষা ফি আলাদা হতে পারে। বড় শহরে খরচ তুলনামূলক বেশি, গ্রামের অঞ্চলে কিছুটা কম থাকে।
কোচিং পড়ার সুবিধা ও অসুবিধা কী কী?
সুবিধা হিসেবে পাওয়া যায় কাঠামোবদ্ধ পাঠ্যক্রম, অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা গাইডেন্স, নিয়মিত মক টেস্ট এবং সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা। অসুবিধা হিসেবে বেড়ে যায় খরচ, সময়ের চাপ এবং বাড়তি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হতে পারে।
কোচিং বাণিজ্য কি শিক্ষার গুণগত মান কমিয়ে দেয়?
কিছু ক্ষেত্রে ফোকাস হয়ে যেতে পারে শুধুমাত্র পরীক্ষায় সফলতার উপরে, যার ফলে মৌলিক ধারণা গভীরভাবে প্রকাশ পায় না। তবে ভালো সিলেবাস, মানসম্মত বই এবং দক্ষ শিক্ষক থাকলে শিক্ষার মান বজায় রাখা সম্ভব।
অনলাইন কোচিং ও অফলাইন কোচিংয়ের পার্থক্য কী?
অনলাইনে সুবিধা হচ্ছে সময় ও স্থান বৈচিত্র্যের সঙ্গে কোর্স করার সুযোগ, রেকর্ডেড ক্লাস দেখা যায়। অফলাইনে সরাসরি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যোগাযোগ, অনুভবের মাধ্যমে শেখার অভিজ্ঞতা বেশি। প্রতিটিতে আলাদা সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
কোচিং সেন্টারে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা কি হতে পারে?
সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মাস্টার্স অথবা পিএইচডি ডিগ্রী এবং শিক্ষকতা বা প্রস্তুতি প্রদানে অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা, ডেমো ক্লাস এবং ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া থাকে নিয়োগের আগে।
কোচিং সেন্টারে অসদাচার রোধের উপায় কী কী?
নিয়মিত অভিভাবক সভা, শিক্ষার্থীর গ্রুপ ফিডব্যাক, বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রক টিম ভিজিট এবং অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম চালু করে কোচিং সেন্টারে অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
কোচিং বাণিজ্যে প্রবেশের আগে কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত?
স্থান নির্বাচন, শিক্ষক সংস্থান, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, লাইসেন্স ও অনুমোদন, বাজেট পরিকল্পনা এবং মার্কেট রিসার্চ করে নিশ্চিত হতে হবে যে কোচিং সেন্টারের স্থায়িত্ব ও মান বজায় থাকবে।
ভবিষ্যতে কোচিং শিল্পের সম্ভাবনা কী?
ডিজিটাল মাধ্যমের প্রসার, ক্যারিয়ার বৈচিত্র্যের বৃদ্ধি এবং পরীক্ষা প্রস্তুতিতে বাড়তি চাহিদার কারণে কোচিং শিল্প দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে। পাশাপাশি মানসম্মত অনেক প্রতিষ্ঠানই গ্রাম ও শহরতলি এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াবে।
উপসংহার
কোচিং ব্যবসা শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করে। এতে অনেক পরিবার সংকটে পড়ে কিন্তু ফলাফল সব সময় সন্তোষ্টিকর হয় না। শিক্ষকরা মার্কেট প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হন, কিয় স্কিলের বিকাশে সময় কম। ছাত্রদের চাপ বেড়ে যায়। সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা মেরামত না হলে এই প্রবণতা চলতেই থাকবে। কিছু কোচিং সত্যিই দরকার, তবে মন্থর পাঠ্যক্রম, রুচিকর উপকরণ ও সৃজনশীল শেখার পরিবেশ জোরদার করলে কোচিং ছাড়াই উন্নতি সম্ভব। ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকরা দায়িত্ব নিয়ে মিলেমিশে কাজ করলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য পূরণ হবে। সব মিলিয়ে কোচিং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো জরুরি। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মৌলিক দক্ষতা এবং সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটবে। অভিভাবকদের সচেতনতা অপরিহার্য।